লালমনিরহাট জেলার পরিচিতি



জেলা পরিচিতি, ভৌগলিক অবস্থান ও আর্থ-সামাজিক

নামকরণের ইতিহাস

সিয়াম বিল্লাহ

সাদ

এ জেলার নাম কেন লালমনিরহাট হলো সে সম্পর্কে বেশ কয়েকটি মত চালু আছে । সেগুলো হলো-

১। উনবিংশ শতাব্দিতে যখন বেংগল ডুয়ার্স রেল লাইন তৈরির জন্য মাটি খননের কাজ চলছিল তখন শ্রমিকরা এখানে মাটিন নিচে লাল পাথর দেখতে পায়। সেই থেকে এ জায়গার নাম হয়েছে ‘লালমনি’।

২। অন্য মতানুসারে বৃটিশ রেলওয়ে যে মহিলার জমি অধিগ্রহণ করেছিল তার নাম ছিল লালমনি। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এলাকার লোকজন এ জায়গার নাম রাখে ‘লালমনি’।

৩। অন্য আরেকটি মত হলো, ১৭৮৩ সালে সাধারণ কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লালমনি নামে এক মহিলা কৃষক নেতা নুরুলদিনকে সাথে নিয়ে বৃটিশ সৈন্য ও জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। সেই থেকে এ জায়গার নাম হয় ‘লালমনি’।

কালের বিবর্তনে ‘হাট’ শব্দটি ‘লালমনি’ শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে ‘লালমনিরহাট’ নামকরন হয়েছে।

———————————— x —————————————

ভৌগলিক অবস্থান

লালমনিরহাট বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত সীমান্তবর্তী একটি জেলা। ২৫.৪৮ ডিগ্রি থেকে ২৬.২৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৮ ডিগ্রি থেকে ৮৯.৩৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে জেলাটির অবস্থান। এ জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলা, দক্ষিণে রংপুর জেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম ও ভারতের কোচবিহার জেলা এবং পশ্চিমে রংপুর ও নীলফামারী জেলা। এ জেলার উত্তরে ধরলা নদী ও দক্ষিনে তিস্তা নদী প্রবাহিত।

লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার ভৌগলিক অবস্থান নিম্নরূপ-

উপজেলার নাম

আয়তন

অবস্থান

লালমনিরহাট সদর

২৫৯.৫৪ বর্গ কিমি

উত্তরে ভারতের কোচবিহার জেলা ও লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলাদক্ষিনে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা ও কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলাপূর্বে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা ও রাজারহাট উপজেলা এবং পশ্চিমে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা।

আদিতমারী

১৯০.০৩ বর্গ কিমি

উত্তরে ভারতের কোচবিহার জেলাদক্ষিনে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলাপূর্বে লালমনিরহাট সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে কালীগঞ্জ উপজেলা।

কালীগঞ্জ

২৩৬.৯৬ বর্গ কিমি

উত্তরে ভারতের কোচবিহার জেলা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলাদক্ষিনে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা ও নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলাপূর্বে আদিতমারী উপজেলা এবং পশ্চিমে নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলা।

হাতীবান্ধা

২৮৮.৪২ বর্গ কিমি

উত্তরে ভারতের কোচবিহার জেলা ও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলাদক্ষিনে কালীগঞ্জ উপজেলাপূর্বে ভারতের কোচবিহার জেলা এবং পশ্চিমে নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা।

পাটগ্রাম

২৬১.৫১ বর্গ কিমি

পূর্বপশ্চিম ও উত্তরে ভারতের কোচবিহার জেলা এবং দক্ষিনে ভারতের কোচবিহার জেলা ও লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা।

Total Hits : 13100

আর্থ সামাজিক তথ্য

কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ জীবন হচ্ছে লালমনিরহাট জেলার শত বছরের ঐতিহ্য। অত্র জেলার সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সবকিছু গ্রামীণ ও কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু সমাজ একটি জায়গায় স্থির থাকে না। বহমান নদী যেমন সাগরের দিকে ছুটে চলে, তেমনি সমাজও সামনের দিকে অগ্রসর হয়, পরিবর্তিত হয়। বস্তুত প্রকৃতিগতভাবেই সমাজ পরিবর্তনশীল। এ অঞ্চলের মানুষের চেষ্টা ও চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে এ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে স্থান ও কালভেদে সমাজ পরিবর্তনের গতি ও মাত্রা সমান হয় না। এ পরিবর্তন কোথাও দ্রুত হয় আবার কোথাও মন্থর। আবার অনেক সময় দেখা যায় একই সমাজের সকল অংশে সমান গতিতে পরিবর্তন হয় না। লালমনিরহাট জেলার গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন অঞ্চল এবং ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর পরিবর্তনের গতি বহুমাত্রিক। সমাজের যে অংশে শিল্পায়ন ও শহরায়ণের প্রভাব, শিক্ষার সম্প্রসারণ, প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ ও উন্নত যোগাযোগসহ নানা ধরনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা বিদ্যমান সে অঞ্চলে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে।

বর্তমান সমাজের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হচ্ছে উন্নয়ন। উন্নয়নও একধরনের পরিবর্তন। এ পরিবর্তন সমৃদ্ধি ও কল্যাণকর। সাধারণভাবে উন্নয়ন বলতে সার্বিকভাবে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্তিক ও পরিবেশগত উন্নয়নকে বুঝায়। সনাতন উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় রূপান্তর প্রক্রিয়াকে উন্নয়ন বলা হয়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বিশেষ রূপই হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তন সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে সমাজের মানুষের সমতাভিত্তিক উন্নয়ন। এখানে দারিদ্র বিমোচন, সম্পদের ন্যায়সঙ্গত বন্টন, মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি, সঞ্চয়, মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত।

No comments

Thanks for your Comment

Powered by Blogger.