রংপুর জেলা পরিষদ ভবন

Photo. Zella Website


১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহ পর বিট্রিশ সরকার এদেশের শাসন ব্যবস্থায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ নং এ্যাক্ট ও ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ নং এ্যাক্ট অনুসারে যথাক্রমে ভিলেজ চৌকিদারী এ্যাক্ট ও বেঙ্গল ভিলেজ চৌকিদারী এ্যাক্ট প্রবর্তিত হয়। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড রিপন কর্তৃক স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসনের প্রস্তাব কার্যকার করার লক্ষ্যে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল কাউন্সিল ৩ নং লোকাল সেল্ফ গর্ভনমেন্ট এ্যাক্ট পাস করে এ আইনের ভিত্তিতে তিন স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান প্রবর্তন করা হয়।

জেলা পরিষদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৯০৯ সালে রংপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৪.৬৬ একর জমির উপর এই ভবনটির নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯১৫ সালে এ ভবনটি রংপুর জেলা পরিষদ হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।

জেলা পরিষদ ভবনটি রংপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর সামনে উত্তরের দিকে শহরের চলাচলের প্রধান রাস্তার উত্তরে পুলিশ লাইন ও এবং এ ভবনের পশ্চিমে ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট অবস্থিত। ভবনটি ৪.৬৬ একর জমির উপরে দন্দায়মান।

মূলভবনের পরিমাপ ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬৭ ফুট প্রস্থ দেয়ালের শীর্ষদেশ রেলের বীম বা গার্ভার স্থাপন করে পর্যায়ক্রমে লোহার পাত বসিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে পাতরা ইট বিছিয়ে ছাদ তৈরি করা হয়েছে। এর চারদিকে বিরাজমান বেষ্টনী প্রাচীর ও স্থাপত্য শৈলী সমৃদ্ধ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। এ প্রাচীরের পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণে অংশ আধুনিক মেশনারী কেশিলে নির্মিত। ফলে মূল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলো চিরতরে নষ্ট হয়েছে। সামান্য কিছু স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য উত্তরের প্রাচীরের সন্নিবেষ্টিত সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও আর্কষণীয় করার জন্য সারিবদ্ধ ভাবে মারলন অলংকরণের কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়।

বড় গম্বুজ ৩টা, ছোট-২৮ মূল গম্বুজগুলোর সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে সুকৌশলে প্রতিটি অষ্টকোণাকৃতি স্তম্ভের  শীর্ষদেশে কিউস (ছত্রী) স্থাপন করে শোভা বর্ধন করা হয়েছে। প্রতিটি ছত্রীর উপরে এ প্র¯ফুটিত পদ্মফুলের পাপড়ীর শীর্ষে কলস মোতিফ শিরচূড়া বা ফিনিয়াল স্থাপন করে ভবনটিকে আরও অনুপম করে তোলা হয়েছে।

ভেন্টিলেটরের সম্মুখে=২+২+৭+২=২২
পশ্চিমে= ৫। পশ্চাতে/দক্ষিণে=৮+৩+৬+২=১৯
পূর্ব দিকে= ৫+২=৭
দোতলায় ওঠার রাউন্ড সিড়ি ১টি। তিন তরায় ওঠার ২টি মই।

নির্মাণ কালে ৬৪টা দরজা ছিল। জানালাগুলো আনুমানিক ১৯৮০-১৯৮২ তৈরি করা হয়। প্রধান প্রবেশ দ্বার দিয়ে জেলা পরিষদের মূল ভবনে যাওয়া ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন শুধু হলরুমের মিলনায়তনের পূর্ব-উত্তর দিকে, পূর্ব দিকের একটি দরজা দিয়ে সাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আয়তাকার ভবনটির ভিতরে মিলনায়তন কক্ষসহ মোট দশটি কক্ষ ছিল। মূল ভবনের চারদিকে বারান্দার নমুনা এখনও সহজে প্রতীয়মান হয়।

এ ভবনটি ব্যবহারের কার্যকাল ১৯১৫-১৬ খ্রিঃ। তাই সংযত কারণে উল্লেখ প্রয়োজন যে, এ বিশাল ভবনটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ৫/৭ বছর সময় লেগেছিল। সেদিক থেকে এর প্রকৃত নির্মাণ কালে (ভিত্তিস্থাপন) আরও ৫/৭ বছর এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে অর্থাৎ ভবনটির নির্মাণ কালে ১৯০৯ থেকে ১৯১১ খ্রিঃ হতে পারে। প্রতিটি স্তম্ভ অষ্টকোণাকৃতি। এর শীর্ষদেশে ষোভা পাচ্ছে। কিউপলা বা ছোট গম্বুজ এবং তার নিচের অংশ টুকুতে যে কারুকার্য খচিত ছিল তার নমুনা এখনো বিদ্যমান।

এই ভবনটির দেয়ালের শীর্ষদেশে পয়িককন্পিত ভাবে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে রেলের বীম (গার্ডায়) স্থাপন করে পর্যায়ক্রমে লোহায় পাত (বাতা) বসিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে পাতরা ইট বিছিয়ে ছাদ রৈী করা হয়েছে। যার অধিকাংশই ইতোমধ্যে অপসারণ করে আধুনিক কৌশলে কনক্রিটের বীমের উপর ছাদ ঢালাই করায় মূল বুট্রিশ আমলীয় প্রযুক্তি ও প্রকৌশলের নমুনা আড়াল হয়ে গেছে। এখন শুধু মিলনায়তন কক্ষসহ পূর্ব ও পশ্চিম দিকের কয়েকটি কক্ষে ছাদে আদি নির্মাণ কৌশলের নমুনা কোন রকমে টিকে আছে।

এ জেলা পরিষদ ভবনটির ছাদেও উপওে শোভা পাচ্ছে রি-ইনফোর্সড তৈরী তিনটি গোলাকার (রসণাকৃতি) গম্বুজ। এ ভার্মে (নি¤œাংশ) একান্তাজ পত্র-পল্লবে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়াও একটি গম্বুজের মধ্যস্থলে প্রস্ফুটিত পদ্মফুলের পাপড়ির ইপওে কলস মোতিফ ‘শিরোচূড়া’ লক্ষ্য করা যায় যা মোগল ও গ্রীক স্থাপত্য শৈলীকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অপর দিকে জেলা পরিষদ ভবনের দেয়ালের শীর্ষদেশে অর্থাৎ রংপুরের ঐতিহাসিক কারমাইকেল কলেজের ৫/৭ বছর আগে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কারমাইকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ক্লাস এ ভবনে হয়।

No comments

Thanks for your Comment

Powered by Blogger.